১৯শে মে, ২০২৪ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম :

ট্রাক্টরের উপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপে উদ্বেগ

ডেস্ক রিপোর্ট» বাজেটে কৃষি যন্ত্র ট্রাক্টরের উপর ২৪ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি। নতুন ভ্যাট ও শুল্ক আরোপের কারণে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুধুমাত্র কাস্টমস ডিউটি হিসেবে ১ শতাংশ এবং অ্যাডভ্যান্স ট্রেড ভ্যাট হিসেবে ৪ শতাংশ আরোপ করা ছিল। কিন্তু আগামী ২০১৭-১৮ বাজেটে তা পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে কাস্টম ডিউটি (সিডি) হিসেবে ১ শতাংশ এবং অ্যাডভ্যান্স ট্রেড ভ্যাট হিসেবে ৪ শতাংশ ও ভ্যাট ১৫ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে। ফলে এর সঙ্গে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ এবং অগ্রিম কর ৩ শতাংশ আরোপ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবমিলিয়ে এখন ট্রাক্টরের উপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে আরও অতিরিক্ত ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে হবে। এতে প্রতিটি ট্রাক্টরে প্রায় দুই লাখ টাকা বাড়তি মূল্য যোগ হবে। ফলে কৃষক বাড়তি দামের কারণে ট্রাক্টর কেনায় আগ্রহ হারাবে।

এ বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ট্রাক্টর আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দ্য মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সার্বিকভাবে কৃষিতে শ্রমিকসংকট ও উৎপাদন বাড়াতে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার দাম কমিয়ে আনতে নগদ প্রণোদনাসহ নানান উদ্যোগ নিয়েছে।শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কৃষকের কাছে খুব জনপ্রিয় এখন ট্রাক্টর। তবে ২৪ শতাংশ ভ্যাট ও নানা ধরনের শুল্ক আরোপ করা হলে দাম বৃদ্ধি পাবে। তাই কৃষকের স্বার্থে ও শস্য উৎপাদনের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এটি প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেন তিনি।

জানা গেছে, চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কমাতে ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ট্রাক্টর। পাওয়ার টিলারের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ট্রাক্টর। একটি পাওয়ার টিলার পরিচালনা করে দিনে খরচ হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা। কৃষকের আয় হয় ৩ হাজার টাকা। ফলে তার নিট আয় থাকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।

অন্যদিকে একজন কৃষক ট্রাক্টর পরিচালনা করলে তার খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। তিনি আয় করতে পারেন প্রায় ১২ হাজার টাকা। ফলে তার নিট আয় থাকে ৬ হাজার টাকা। বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের যৌথ জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ৩৫ হাজারের বেশি ট্রাক্টর চালু রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছ থেকে নগদ প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার কারণে ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ট্রাক্টরের বাজার ৩৫-৪০ শতাংশ হারে সম্প্রসারণ হয়েছে।

২০১২ সালে ৪ হাজার ৬০০ ট্রাক্টর আমদানি করা হয়, যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৪১৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ টি ট্রাক আমদানি করা হয়েছে। ট্রাক্টর আমদানি ও বিপণনের নেতৃত্ব দিচ্ছে দ্য মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ট্যাফে ব্র্যান্ড, কর্ণফুলী লিমিটেডের মাহিন্দ্র, মেটাল প্লাসের আইসার, পারফরমেন্স মোটরসের স্বরাজ, গেটকোর নিউ হল্যান্ড এবং এসিআই মোটরসের সোনালিকা ট্রাক্টর। তবে ভ্যাট ও শুল্ক আরোপের কারণে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এজন্য কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

নগদ প্রণোদনা ও দেশীয় শিল্পের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি উৎপাদনসহ অর্থায়ন সুবিধা দেয়া হয়েছে। বাজেটের শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের বিষয়টি এখনও তাদের নজরে আসেনি। তবে কৃষকের স্বার্থে এ ধরনের শুল্ক আরোপ কিংবা দাম বাড়তে পারে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
।। জাগো নিউজ

Share Button