১৯শে মে, ২০২৪ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম :

কাপ্তাইয়ে তামাক ছেড়ে সবজিচাষে ঝুঁকছেন কৃষক

ডেস্ক রিপোর্ট» কাপ্তাই উপজেলার যে জমিতে এক সময় তামাকচাষ হত, এখন সেই জমিতে সবজিচাষ করা হচ্ছে। আর সবজিচাষ করে সফল্যের হাসিও ফুটছে চাষির মুখে।

স্থানীয় কৃষক জানান, তামাক চাষের সময় হলেই বিভিন্ন বিড়ি-সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মাঠকর্মীরা চাষিদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তামাকচাষে আগ্রহী করে তোলেন।

তামাকচাষিদের নগদ অর্থ ও বিভিন্ন উপহারসামগ্রী বিতরণ করে, যার ফলে তামাকচাষে জমি ও পরিবেশের ক্ষতির কথা অবগত হলেও কাপ্তাইয়ে থেমে নেই তামাকচাষ।

ওয়াগ্গা এলাকার কৃষক নুরুল আমিন বলেন, ‘কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা বিজিবি ক্যাম্পের বিপরীতে কাপ্তাই সড়কের পাশে ছড়াপাড়ের বিস্তীর্ণ জমিতে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে শুধুমাত্র তামাকের চাষ হত। তামাক ছাড়া ওই জমিতে অন্য কোনো ফলন হবে না বলে সবার ধারণা ছিল। তাই সারা বছর জমিতে তামাকচাষ দেখা যেত। তামাকচাষে লাভ বেশি ভাবা হলেও তাতে শারীরিক অসুস্থতা আর মনে অশান্তি ছিল।

পাশাপাশি আশপাশের মানুষ তামাকচাষ করা ভালোভাবে দেখত না। আমরা তামাকচাষ করছি কথাটা কারো কাছে বলাও যেত না। সব সময় এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করত কৃষকদের মাঝে। কিন্তু এখন তামাকের ওই জমিতে সবজিচাষ হচ্ছে। সবজির ফলনও ভালো হচ্ছে। এতে নিজেদের কাছে আনন্দ লাগছে তেমনি অনেকটা উৎসাহ নিয়ে সবাইকে বলতে পারছি যে আমরা এখন বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ করছি।’

কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা এলাকার বর্গাচাষি কামাল উদ্দিন জানান, বছর তিনেক আগে ওই জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে তামাকের বদলে অন্য সবজিচাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তামাক বাদ দিয়ে প্রথমে এক বছর জমি অনাবাদি রাখা হয়। পরবর্তীতে প্রথমবারের মতো জমিতে লাউ, বেগুন, ঢেঁড়স ইত্যাদির চাষ করা হয়। অবাক করা বিষয় হল প্রথম বছরেই জমিতে খুব ভালো সবজিচাষ হয়। পরবর্তী বছর একই জমিতে বিভিন্ন সবজির সাথে টমেটোর চাষ করা হল। সেবারও খুব ভালো ফলন হয়। গত বছর জমিতে তিত করলার চাষ করা হয়। তিত করলার ফলনও হয়েছে ভালো। এ বছর করা হয় দেশি জাতের বেগুনের। এক একর জমিতে বেগুনের চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েক মাসে এই জমি থেকে প্রায় ৭৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করা হয়েছে।

কামাল উদ্দিন বলেন, ‘সবজিচাষ করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি। পাশাপাশি আমার পরিচিত অনেককে সবজি উপহার দিয়েছি। যারা সবজি খেয়েছেন তারা সবাই আমার প্রশংসা করেছেন। আমার সবজি ক্ষেতের পাশেই কাপ্তাই সড়ক। আর কাপ্তাই উপজেলা সদর বরইছড়ি বাজারও খুব বেশি দূরে নয়। বাজারে নেওয়ার সাথে সাথে সবজি বিক্রি হয়ে যায়।’

শীলছড়ির কৃষক আলম বেপারি জানান, উপজেলার শীলছড়িতে পাহাড়ি ছড়ার পাশের জমিতে বছরের পর বছর ধরে তামাকচাষ করা হত। ওই জমিতে তামাকচাষ না করার জন্য বিভিন্নভাবে বলা হলেও তার ধারণা ছিল জমিটি তামাকচাষ উপযোগী। তামাক ছাড়া জমিতে অন্য কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব নয়। তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে কয়েক বছর আগে জমির মালিক তাঁকে তামাকের বদলে যেকোনো ফসল চাষ করার নির্দেশ দেন।

কৃষক মালিকের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তামাকচাষ ছেড়ে জমিতে শাক সবজির চাষ শুরু করেন। আর আশ্চর্যজনকভাবে ওই জমিতে শাক সবজির উৎপাদন অনেক ভালো হতে লাগল। প্রথম বছর লাউ, পরের বছর ফুলকপি, বেগুন ইত্যাদি চাষ করে তিনি সফলতা পাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, এই জমিতে আর কখনো তামাকচাষ করা হবে না। প্রতি বছর যে পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে তাতে খরচ বাদ দিয়ে ভালো মুনাফা থাকায় ফলন দেখে কৃষকরা বেজায় খুশি বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম চৌধুরী জানান, শীলছড়ির যে জমিতে বছরের পর

বছর তামাকচাষ হত সেই জমিতে কয়েক বছর আগে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ শুরু হয়। তবে চাষে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যকে সামনে রেখে শাক-সবজির বদলে কিছু জমিতে ফুলচাষের উদ্যোগও নেওয়া হয়। আর সবজি ও ফুলচাষ করে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যও পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান। চাষি কামাল গত কয়েক বছর এই জমিতে বেগুন, তিত করলা, টমেটো, মুলা ও অন্যান্য শাক-সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

কাপ্তাই উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মংসুইপ্রু মারমা বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবজিচাষ করার জন্য স্থানীয় চাষি কামালসহ সব কৃষককে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।

কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে চাষি কামাল তামাকের জমিতে সবজিচাষ করে সফলতা পাচ্ছেন এবং পূর্বাঞ্চলীয় সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন ২য় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় এই চাষ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. দিলদার হোসেন বলেন, ‘চাষি কামাল তামাকের রাজ্যে যেভাবে সবজিবাগান সৃজন করেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। আর এ কাজে উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রযুক্তি সহযোগিতা দিয়ে চাষি কামালকে যেভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে তাও অন্যান্য চাষিদের দৃষ্টি কেড়েছে।’ তিনি অন্য চাষিদেরও এভাবে সবজিচাষের আহ্বান জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম বলেন, ‘ওয়াগ্গায় তামাকের জমিতে আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, টমেটো, বেগুন, লাউ, মুলা করলাসহ বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকরা যাতে আর কোনোভাবে তামাকচাষের দিকে ঝুঁকে না পড়েন সেদিকে নজর রাখতে হবে।’

কাপ্তাইয়ে তামাকের আগ্রাসন রোধে আইনানুগ ব্যবস্থা্ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

Share Button