১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম :

চট্টগ্রামে কমছে কৃষি জমি

কৃষিকাজ ডেস্কঃঃ চট্টগ্রাম অঞ্চলে কমছে আবাদি ও এক ফসলি জমির পরিমাণ। ২০০৯-১০ সালে এ অঞ্চলে আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২৩ হাজার ৪০৪ হেক্টর, যা চার বছরের ব্যবধানে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৭১৩ হেক্টরে। অন্যদিকে চার বছর আগে একফসলি জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪১৪ হেক্টর, যা কমে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৬ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, বসতি ও শিল্পকারখানা স্থাপন এবং কৃষি জমি সুরক্ষা আইন না থাকায় কৃষি জমি ভরাট হচ্ছে। সেসঙ্গে বাড়ছে ইচ্ছামতো জমির ব্যবহারও। এতে কৃষি জমির পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।

বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. বছির উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে আবাদি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, বসতি ও শিল্পকারখানা স্থাপনের প্রতি মানুষ বেশি আগ্রহী হয়েছে, যে কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। বর্তমানে যে হারে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে তা রোধ করা সম্ভব না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ দ্বিগুণ হারে কমে যাবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের কৃষি খাতের অগ্রগতির ওপর।’ চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘চাষাবাদের চেয়ে মানুষের বসতি নির্মাণের প্রতি ঝোঁক অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যে কারণে মানুষ চাষাবাদের জমি বাড়তি লাভের আশায় অন্যের কাছে বিক্রি করছে। সেসঙ্গে কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি ও শিল্প কারখানা নির্মাণ করছে। এতে প্রতি বছর আবাদি জমির একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

এ অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ২০০৯-১০ সালে আবাদযোগ্য কৃষি জমি ছিল ২ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, যা ২০১৪-১৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ১৬২ হেক্টরে। এ জেলায় ২০০৯-১০ সালে একফসলি জমির পরিমাণ ৬২ হাজার ৭৭৬ হেক্টর থাকলেও তা ২০১৪-১৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৫৩ হেক্টরে। একইভাবে ফেনী জেলায় ২০০৯-১০ সালে আবাদযোগ্য কৃষি জমি ছিল ৭৫ হাজার ৯২২ হেক্টর, যা ২০১৪-১৫ সালে কমে ৭১ হাজার ৫৫২ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্মীপুরে ২০০৯-১০ সালে ১ লাখ ২০ হাজার ৭৫৩ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি ছিল, যা ২০১৪-১৫ সালে কমে ৯২ হাজার ৯৯৪ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ তেমন না কমলেও কমেছে একফসলি জমির পরিমাণ। কক্সবাজার জেলায় ২০০৯-১০ সালে একফসলি জমির পরিমাণ ২০ হাজার ৪৬৯ হেক্টর থাকলেও ২০১৪-১৫ সালে তা কমে মাত্র ৭ হাজার ৩০০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে নোয়াখালী জেলায় ২০০৯-১০ সালে একফসলি জমির পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার ২২৩ হেক্টর, যা ২০১৪-১৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৬৪৩ হেক্টর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জমিতে চাষাবাদের তুলনায় জমির মালিকরা ঘরবাড়ি ও শিল্প কারখানা নির্মাণ এবং ডেভেলপারদের কাছে বাড়তি দামে জমি বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির লোভনীয় অফারে মালিকরা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে কৃষি জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম বলেন, ‘ভূমি রক্ষায় সমন্বিত কোনো পরিকল্পনা না থাকায় অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে তৈরি হচ্ছে বাড়ি। নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্প-প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, হাট-বাজার দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দ্রুত ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে
।। সমকাল

Share Button