২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম :

কমলা চাষে লাখপতি

কৃষিকাজ ডেস্ক» রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে বাগান ও বসতবাড়িভিত্তিক কমলা চাষ শুরু হয়েছে। এ জেলায় অনেক কমলা বাগান গড়ে উঠার পাশাাশি বাম্পার ফলনও হয়েছে। কমলা চাষে সাফল্য দেখে অনেকেই এদিকে ঝুঁকছেন।

এদিকে কমলা চাষ করে লাখপতি হয়েছেন মধুসুদন তালুকদার (৪০)। তার বাড়ি রাঙামাটি পার্বত্য জেলার নানিয়াচর উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নের নম কার্বারিপাড়ায়। কমলা চাষে তার এসেছে অকল্পনীয় সাফল্য।

এখন মধুসুদনের বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে রঙিন কমলা। বাগানে অভাবনীয় ফলনে মধুসুদনের মুখে হাসি ফুটেছে। সেই সঙ্গে তিনি লাখপতি হয়েছেন।

এদিকে দুর্গম পাহাড়ে কমলার এমন ফলন অবাক করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগকেও। কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, অতীতে এমন কমলার ফলন রাঙামাটি জেলায় দেখা যায়নি।

সম্প্রতি নম কার্বারিপাড়ায় মধুসুদনের কমলা বাগান গিয়ে দেখা যায়, গাছের ডালে ডালে ঝুলছে পাকা রঙিন কমলা। কমলার ভারে নিচু হয়ে পড়েছে গাছের ডালপালা। রক্ষার জন্য আটকে দিতে হয়েছে বাঁশের খুঁটি। একেকটি কমলার ওজন প্রায় ২০০-৩০০ গ্রাম।

k1

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুসুদন তালুকদার জানান, এ বছর তিনি ঘরে বসে ৬ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিক্রি করেছেন ১৪ লাখ টাকার কমলা। পাইকার ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে কমলা নিয়ে যান।

তিনি বলেন, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা আর বাজারে দাম না থাকায় বাগানে নষ্ট হয়ে যেত আম, কাঁঠাল ও কলা। কিন্তু বাজারে একটি কমলার দাম ১৫-২০ টাকা। পরিবহনও সহজ। এটি মাথায় রেখে ২০০৭ সালে ২ একর পাহাড়ি জায়গায় ৭০০ কমলার চারা লাগাই।

২০১৩ সালে কিছু গাছে কমলা ধরে। ২০১৪ সাল থেকে বাগানের অর্ধেক গাছে ফলন আসতে শুরু করেছে। কমলা বিক্রির জন্য তার আর চিন্তা করতে হয় না। সময় এলে ব্যবসায়ীরা চলে আসেন কমলা কিনতে। কেউ কেউ অগ্রিম টাকা দিয়ে বাগানটি দেখাশোনা করে দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

মধুসুদন বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে রাতের বেলা এক ধরনের পোকা কমলার ক্ষতি করে। ফলে কমলাগুলো ঝরে পড়ে। কীটনাশকেও পোকাগুলো মারা যায় না। পোকা দমনে রাত জেগে পাহারা দিতাম এবং পোকাগুলো মেরে ফেলতাম। এ পোকার আক্রমণ না হলে আরও কিছু টাকা পেতাম।

স্থানীয় কমলা ব্যবসায়ী জ্যোতি রঞ্জন চাকমা জানান, এখন গাছ থেকে কমলা ঝরে পড়ার সম্ভবনা নেই। পরিপক্ক কমলা ছিঁড়ে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। মধুসুদনের বাগানের কমলা বর্তমানে রাঙামাটি শহরে বিক্রি করছেন প্রতিটি ২৫-৩০ টাকায়। আকারে বড় ও স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় মানুষ সহজে এ কমলা কেনছেন।

k2

এদিকে মধুসুদনের সফলতা দেখে অন্যরা ঝুঁকছেন কমলা বাগান করার প্রতি। নম কার্বারিপাড়ার উজ্জল চাকমা (৪৪) ও শান্তি রঞ্জন চাকমা (৪৫) বলেন, মধুসুদনকে দেখে এলাকায় এখন অনেকে কমলা বাগান করছেন। এলাকার মাটি উর্বর ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় কমলার ফলন খুব ভালো হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা।

রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রমণী কান্তি চাকমা বলেন, জেলায় কমলা বাগানের এলাকা ৭৬০ হেক্টর। এর মধ্যে কমলা উৎপাদনে বর্তমানে রাঙামাটির শীর্ষস্থান দখল করেছে নানিয়াচরের সাবেক্ষং। স্বাদে মিষ্টি আর রসালো।

আকারে বড় হওয়ায় কমলার বাজার দখল করেছে নানিয়াচরের কমলা। নানিয়াচরের মাটি কমলা চাষের জন্য উপযোগী বলছে কৃষি অফিস। এক সময় রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকের কমলা বিখ্যাত হলেও এখন নানিয়াচরের কমলা সেই স্থান দখল করে নিয়েছে।

তিনি বলেন, পোকা দমন ও সার প্রয়োগে বিষয়ে কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আরও লাভবান হবেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ বাগানিদের পরামর্শসহ যে কোনো সহায়তা দেবে।

।। সৌজন্যেঃ জাগো নিউজ।

Share Button