
কৃষিকাজ ডেস্ক» বগুড়ার মহাস্থানগড়ে আড়াই হাজার বছরের পুরনো শস্যবীজ আবিষ্কারের দাবি করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান জামি। তাঁর নেতৃত্বে প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল দুর্গের জাহাজঘাটা এলাকায় গত ৩ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খননকাজ করার সময় এ পুরনো শস্যবীজের খোঁজ পায়।
গতকাল শনিবার সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান জামি কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা ধারণা করছেন এই শস্যবীজ প্রাচীন বাংলার কৃষি অনুশীলন ও পরিবেশগত অবস্থার অনেক দিক আবিষ্কার করতে সহায়তা করবে। এই প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিকরা বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার স্বরূপ উদ্ঘাটনের জন্য শস্যবীজ গবেষণা করবেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক মিজানুর রহমান জামি আরো বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক দলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২৯ শিক্ষার্থী এবং সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা ছিলেন। তাঁরা বগুড়ার মহাস্থানগড়ে মাটির ৪ দশমিক ৩ মিটার খনন করে প্রায় ১০ হাজার শস্যবীজ যেমন ধান, মটরশুটি, মসুর, সিম, ছোলা, মুগডাল ও তুলা বীজ খুঁজে পান।
তিনি বলেন, ‘শস্যবীজগুলোর মাধ্যমে আমরা সে সময়ের জলবায়ুসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারব। সেই সময় বাংলাদেশের মানুষের অভিবাসন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ পাবে এবং প্রাচীন বাংলাদেশি সভ্যতার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেবে।’
দলটি মাটি খনন করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক বসতঘর খুঁজে পেয়েছে, যা প্রায় ৮০০ থেকে আড়াই হাজার বছরের পুরনো। এ ছাড়া পাওয়া গেছে স্বল্প মূল্যবান পাথর, কাচের পুঁতি, টেরাকোটা বল, বোতলের ছিপি এবং উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, যা সে সময়ের অভিজাত সম্প্রদায় ব্যবহার করত বলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা।
প্রাপ্ত ধানের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য গবেষণা করে প্রত্ন-উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ খননকাজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ‘অরাইজা স্যাটিভা আউশ’ চালের কিছু নমুনা, যা এশিয়ার তিনটি দুর্লভ চালের জাতের একটি। তাঁরা ধারণা করছেন, এটি বাংলা ও আসামের হতে পারে। এশিয়ান ধানের তিনটি জেনেটিক বৈচিত্র্যের মধ্যে অরাইজা স্যাটিভা জাপোনিকা, (১০-১২ হাজার বছর আগে চীনে উদ্ভূত হয়), অরাইজা স্যাটিভা ইন্ডিকা (৮-১০ হাজার বছর আগে উত্তর ভারতে উদ্ভূত হয়) এর আগে এশিয়ার বিভিন্ন প্রত্নস্থান থেকে পাওয়া গেলেও ‘অরাইজা স্যাটিভা আউশ’ প্রজাতির ধান এই প্রথম কোনো প্রত্নতত্ত্ব স্থান থেকে পাওয়া গেল।
মিজানুর রহমান জামি বলেন, ‘বগুড়াতে যে চালের জাতের খোঁজ পেয়েছি প্রাথমিকভাবে বলতে পারি, এটি আউশ চালের একটি বৈচিত্র্য।’
তবে গবেষকরা এখনো ‘আউশ’ বন্য চালের জাতের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত নন। আরো গবেষণার জন্য নমুনাগুলো অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি অব আইসোটপ এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ল্যাবরেটরি অব আর্কিওবোটানি অ্যান্ড প্যালিওইকোলজিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
নমুনাগুলোর ডিএনএ এবং আইসোটোপ বিশ্লেষণের পর ফসলের প্যাটার্ন, কৃষি পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস ও প্রাচীন বাংলার সভ্যতার অন্যান্য নির্দেশক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে।
সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান জামি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজি থেকে প্রত্ন-উদ্ভিদবিদ্যা ও পরিবেশ প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি এবং গবেষণা শেষ করে দেশে ফিরেছেন। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র প্রত্ন-উদ্ভিদ বিজ্ঞানী।