ডেস্ক রিপোর্ট» বাঘারপাড়ার কৃষক সত্যজিৎ বিশ্বাস হাবু (৪৫)। কোনো দিন স্কুলে যাননি। কিন্তু তিনি কৃষিকাজ ভালো বোঝেন। ২০১২ সালে ভারতের রাজস্থানে বেড়াতে গিয়ে খুব চিকন ও ছোট আকৃতির ধানের ক্ষেত দেখে অবাক হন। ওই ধানক্ষেত থেকে চারটি শীষ কেটে তিনি পকেটে ভরে বাড়ি নিয়ে আসেন। এরপর ধানক্ষেতের এক পাশে তা লাগিয়ে দেন। এভাবেই তিনি এক বছরে কয়েক কেজি বীজ তৈরি করেন। এরপর নিজের ৫০ শতক জমিতে ওই ধানের চাষ করে ৩৫ মণ ধান পান। কৃষকদের মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। তারা হাবুর কাছ থেকে বীজ কিনে নিয়ে এই ধান চাষ করে লাভবান হন। এ কারণে কৃষকরা এই ধানের নাম দেন ‘হাবু ধান’।
পাঁচ বছরের ব্যবধানে এবার বাঘারপাড়া উপজেলার দুই হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে হাবু ধানের চাষ হয়েছে। শুধু বাঘারপাড়া উপজেলা নয়, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, মাগুরা, ঝিনাইদহ জেলায়ও বোরো এবং আমন মৌসুমে হাবু ধানের চাষ হচ্ছে। তবে চলতি আমন মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কোনো কোনো এলাকায় হাবু ধানের ফলন বিপর্যয় হয়েছে।
সরেজমিনে খবর নিয়ে জানা যায়, বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া, কড়ইতলা, লক্ষ্মীপুর, রামকৃষ্ণপুর, শেখেরবাথান, কয়ালখালীসহ আরো অনেক গ্রামে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে এই ধানের চাষ হয়েছে। পাইকপাড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়া কয়েক বিঘা জমিতে হাবু ধানের চাষ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা তাঁর ক্ষেতে ক্রপ কাটিং করে বিঘাপ্রতি ১৭ মণ ফলন পেয়েছেন। কড়াইতলা গ্রামের আজিজুর রহমানের ক্ষেতে বিঘাপ্রতি ১৬ মণ হাবু ধান ফলেছে। যশোর সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন আমন মৌসুমে এবার প্রথমবারের মতো এক বিঘা জমিতে হাবু ধানের চাষ করেন। তিনি বিঘাপ্রতি ফলন পেয়েছেন ২০ মণ। জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এবার বৃষ্টিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেতের ধানের চারা শুয়ে পড়লেও আমার ক্ষেতের হাবু ধানের চাড়া সোজাই ছিল। আমি বিঘাপ্রতি ২০ মণ ফলন পেয়ে খুবই খুশি। ’ এ ছাড়া সদর উপজেলার বড় মেঘলা গ্রামের মোসলেম উদ্দিন, আক্তারুজ্জামান হাবু ধানের চাষ করে বিঘাপ্রতি ১৭-১৮ মণ ফলন পেয়েছেন। এ ব্যাপারে বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আলম বলেন, ‘এবার উপজেলার দুই হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে হাবু ধানের চাষ হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণে ফলনে এর প্রভাব পড়েছে। আমরা ক্রপ কাটিং করে হেক্টরপ্রতি ৫ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছি। হাবু ধানের পরিচর্যা সম্পর্কে ইন্টারনেটে চেষ্টা করেও কোনো তথ্য পাইনি। এই ধান নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন। ’ যার নামে এ ধানের নামকরণ সেই সত্যজিৎ বিশ্বাস হাবু বলেন, ‘ধানটি খুবই সরু আর ছোট। আর তাই পছন্দ হওয়ায় রাজস্থান থেকে চারটি ছড়া নিয়ে আসি। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা এসে বীজ কিনে নিয়ে যায়। এ ধানের ভাত খুব ভালো। আর সব সময় চাষ করা যায়। এ বছর কেন ফলন কম হলো তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। ’
গত বছর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ভাগ্যরানী বণিকসহ কয়েকজন বিজ্ঞানী পাইকপাড়া গ্রামে এসে সত্যজিৎ বিশ্বাস হাবুর সঙ্গে কথা বলেছেন। মাটি, ধান ও চাল সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন তাঁরা। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ময়মনসিংহের মহাপরিচালক ড. শমসের আলীসহ কয়েকজন বিজ্ঞানীও হাবু ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।
কালের কন্ঠ