৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম :

সীতাকুণ্ডে লাউচাষ সুদিন ফিরেছে তিন হাজার চাষির

ডেস্ক রিপোর্ট» মো. নবী একজন কৃষক। মৌসুম ভেদে নানান ফসল চাষ করেই দিন কাটে তাঁর। শীত মৌসুমে তিনি চাষ করেন লাউ, শিম, টমেটো ইত্যাদি। এবারও এসব সবজিচাষ করেছেন।

তবে প্রাকৃতিক কারণে এবার শিমে খুব একটা লাভ হয়নি। তবে সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে গেছে লাউচাষ করে। তিনি দ্বিগুণ লাভ পেয়েছেন।

কৃষক নবীর বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল গ্রামে।

কৃষিই তাঁর প্রধান জীবিকা। আলাপকালে নবী জানান, তিনি এক একর জমিতে লাউচাষ করেছেন এবার। আশ্বিন মাসের দিকে এ জমি চাষ করতে বীজ, সার, বাঁশের কঞ্চি, শ্রমিক মজুরি ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। ইতোমধ্যে লাউ বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকার। যা ফসল আছে তাতে

সামনে আরো অন্তত লাখ টাকার লাউ বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

একইভাবে লাউ বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভের কথা জানালেন সীতাকুণ্ড পৌরসদরের মধ্যম মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী হোসেন। বাপ-দাদার সাথে একসময় পাহাড়েই চাষাবাদ করত আলী। এখন বয়সের ভারে আর পাহাড়ে যাওয়া হয় না। এখানে সমভূমিতে থাকা পৈতৃক জমিতে চাষ করেন নানান ফসল। শীত মৌসুমে অনেক রকম সবজিচাষ করেন তিনি। এর মধ্যে লাউ অন্যতম। কৃষক মো. আলী বলেন, বাজারে লাউয়ের চাহিদা দারুণ। মৌসুমের শুরুতে একটি লাউ ৫০ থেকে ৮০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছিল। এখন প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।

এভাবে নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মোট দেড় লক্ষাধিক টাকার লাউ বিক্রি করেছেন তিনি। বিক্ষিপ্তভাবে তিনি দুই একর জমিতে লাউ চাষ করেছিলেন। এ জমি থেকে কমপক্ষে তিন লাখ টাকার লাউ বিক্রি হবে। তাঁর সার্বিক খরচ হয়েছিল এক লাখ বিশ হাজার টাকার মতো। যা ইতোমধ্যেই উঠে আরো লাভ হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চের প্রথম দিক পর্যন্ত লাউ বিক্রি হবে। এ হিসাবে তিন লাখ টাকার বেশি বিক্রি হবে বলে মনে করেন তিনি।

ওই দুই কৃষক জানান, সীতাকুণ্ডে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা প্রতি হাটের দিনে এখানে এসে সবজি কিনে নিয়ে যান। তাদের হাত ধরেই লাউ চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঞ্চলে। এভাবে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণে অবদান রাখছেন এই চাষিরা।

সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী জানান, শুধু তাঁর ইউনিয়ন এলাকায় এ বছর ১৫ হেক্টর জমিতে ১০০ এর বেশি কৃষক লাউচাষ করেছেন। প্রত্যেকের জমিতেই ভালো লাউ হয়েছে। কৃষকরা বাজারে পেয়েছেন ন্যায্য মূল্যও। ফলে প্রায় সবাই দুই থেকে তিনগুণ লাভ করছেন।

কৃষক জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সর্বত্রই কমবেশি লাউচাষ হয়ে থাকে। এখানে পাহাড়, সমতল ভূমি কিংবা সাগর উপকূলের সর্বত্রই প্রচুর লাউয়ের চাষ হয়। কৃষকরা নিজেরা যেমন এ সবজি খান তেমনি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেন। তারা জানান, এখন চাষিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতার সাথে চাষাবাদ করছেন। শুধুমাত্র ফসল উৎপাদন করেই তারা ক্ষান্ত নন।

সাধারণ মানুষ যেন

বিষমুক্ত সবজি পেতে পারেন সেই লক্ষে তারা ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে করেন ফেরোমন ফাঁদ। ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকারা এই ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়। স্থানীয় এনজিও ইপসা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অসংখ্য কৃষককে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে এনজিও সংস্থা ইপসার কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ জানান, চলতি মৌসুমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে তারা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে উপজেলায় প্রায় ২ হাজার ফেরোমান ফাঁদ বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন। আরো প্রায় ৩ হাজার ফাঁদ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার প্রক্রিয়া চলছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ সালেহীন বলেন, ‘এখানে লাউয়ের উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরা ক্রমশ লাউ চাষের আগ্রহী। তারা সবাই প্রায় দ্বিগুণ লাভ করছেন।’

উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন, ‘জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত লাউ উৎপাদন হচ্ছে এখন।’

চলতি বছরে উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজারের বেশি কৃষক লাউচাষ চাষ করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান তিনি।

Share Button