৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম :

রঙধনু চার্টের পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা

ডেস্ক রিপোর্ট» খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী এক সীমাহীন দায়বদ্ধতা চলছে। ৬ বিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পৃথিবীতে অনাহারি মানুষের সংখ্যাই বেশি। আর বাংলাদেশের অবস্থা বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে অনেকভাবে তুলনীয়। এদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রয়োজন বলে আমরা খাদ্য উৎপাদন বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলছি অহরহ। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না নিরাপদ খাদ্য ব্যতিরেকে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুললে তা আরো বিপদ হয়ে যাবে। সুতরাং  খাদ্য নিরাপত্তার সাথে নিরাপদ খাদ্যের কথা ভাবতে হবে একান্তভাবে। গত বছরে প্রথমবারের মতো আলুর উৎপাদন ১০২ কোটি ১৫ লাখ টন হয়েছে। আগের বছরে আলুর উৎপাদন ছিল ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার টন। ১ বছরে বেড়েছে ৭ লাখ ৪১ হাজার টন। অন্যান্য সবজি উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ মেট্রিক টন। এক বছরে সবজি উৎপাদন ১০ লাখ ৪৪ হাজার টন বা ৮ শতাংশ বেড়েছে (বিবিএস)। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। এফএওর হিসাব মতে, গত ৪৫ বছরে সবজি উৎপাদন বেড়েছ ৫ গুণ হারে। গত অর্থ বছরের সবজি রফতানি হয়েছে ৮৩৪ কোটি টাকার। কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ৫ শতাংশ। ধানের বিকল্প হিসেবে সবজির আবাদ এ কারণে বেড়েছে।

বাংলাদেশের সবজি বিশ্বের ৫০টি দেশে রফতানি হয়। মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, ওমান এসব দেশে রফতানি হচ্ছে। রফতানিকৃত সবজির মধ্যে আছে আলু, বরবটি, চিচিঙ্গা, করলা, লালশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, টমেটো, পেঁপে, বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ, কচুরলতি, মিষ্টিকুমড়া, শিমের বিচি, কাচকলা, কলারফুল, কচুশাক, কাঁঠালের বিঁচি, পটোল, ডাঁটাশাক এসব। গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সবজি রফতানি করে আয় হয়েছিল ১৪ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার। ১৯৯১ সালে আগে বিশ্বের ২০টি দেশে আলু রফতানি হতো। বর্তমানে ২৭টি দেশে আলু রফতানি হয়। আমাদের বার্ষিক আলুর চাহিদা ৭০ লাখ মেট্রিক টন। সুতরাং প্রতি বছর আমরা অন্তত ৩০ লাখ মেট্রিক টন আলু রফতানি করতে পারি। আমাদের দেশে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক সবজি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট। জৈবকৃষি দিয়ে পরিবেশবান্ধব বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের ট্রেন্ড আস্তে আস্তে বাড়ছে। সবজি চাষের আওতায় জমি কমলেও আমাদের সবজি উৎপাদন ও ফলন বাড়ছে। বছরে একই জমিতে চারবার সবজি চাষ হচ্ছে। তবে সব বিষয় শেষে আমাদের সতর্কতার সাথে বিবেচনায় রাখতে হবে মানসম্মত গুণগত সবজি উৎপাদন। কেননা এখনও ৩০ শতাংশ সবজি অপচয় হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কৃষকের দিকে আরো বেশি নজর দিতে হবে।

হতাশার মাঝেও আলোর ঝিলিক আমাদের হাতছানি দেয়। এ সোনার দেশে কতো হাজারো বিজয়ী ইতিহাস আর ঐতিহ্যবাহী সম্পদ আমাদের হাতছানি দেয়, জমা আছে আমাদের গর্বিত ভা-ারে তার মূল্য জানিনা বলে সেগুলো কদর পায়না। খাদ্যের কথাই বলি, ভালো খাদ্য বলতে আমরা সাধারণত দামি বিদেশি খাবারকেই বুঝি। অথচ আমাদেরও আছে অনেক মূল্যবান ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবার-দাবার। একটু পুষ্টিসচেতন হলেই আমরা পুষ্টি ও খাদ্যভিত্তিক সম্ভাবনাকে অনেকটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি।

খাদ্য গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হলো সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম হয়ে বেঁচে থাকা। যে কোনো খাবার খেলে পেট ভরে যায় মনের চাহিদা মেটে, একথা ঠিক। কিন্তু তাতে দেহের চাহিদা কোনো ভাবেই মিটিয়ে সুস্থ থাকা যায় না। সে জন্য প্রকৃত বা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে আমাদের সবার পরিষ্কার জ্ঞান ও ধারণা থাকা দরকার। আমাদের দেশে এখন আর খাদ্য ঘাটতি নেই। তবে পুষ্টি সমস্যা এখনও আছে। আর পুষ্টিঘাটতির চেয়ে পুষ্টি জ্ঞান সমস্যা আরো ব্যাপক। এদেশের অনেকেই হয়তো পুষ্টি সমস্যায় ভুগছে। আশ্চর্যের কথা হলো কেউ ভুগছে অপুষ্টিতে পুষ্টি সম্মত খাবার না খেয়ে; আবার কেউ ভুগছে অতিপুষ্টিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খেয়ে। পুষ্টিহীনতার কারণে অনেকে অহরহ অসুস্থতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের গর্ভবতী মা, দুগ্ধদানকারী মা ও শিশুরাই এর বেশি শিকার। এদের ঘাটতি পূরণে দানাদার খাদ্যকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। অথচ এ ধরনের খাবার ছাড়া শাকসবজি, ফলমূল খাবারের যে বেশি ঘাটতি সেটা আমরা বুঝি না। বিশেষ করে শাকসবজি, ফলমূলে যে পুষ্টির আধার এটা আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতে চাই না। পুষ্টিজ্ঞানের অভাবে সুষম খাদ্য গ্রহণের প্রতি আমরা মোটেই সচেতন না। এ সব কারণে পুষ্টিশিক্ষা জ্ঞান আর প্রচারণার দরকার অনেক বেশি।

আমরাতো জানি নানা উপাদান দিয়ে গঠিত আমাদের শরীর। সুতরাং শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত এবং পরিমিত উপযুক্ত খাবার আমাদের খেতে হবে। আমাদের জানতে হবে সব মানুষের খাবার একরকম না। পরিশ্রমী মানুষ, দুগ্ধপোষ্য মা, গর্ভবতী নারী, শিশু, বাড়ন্ত বয়স ছেলে মেয়ে, বয়স্ক সবার জন্য আলাদা হিসাব করে খাওয়া দিতে হবে। তবেই পুষ্টিসমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারবে সবাই। যেমন গর্ভবতী, দুধপ্রদানকারী মা, শিশু, বাড়ন্ত ছেলে মেয়েদের জন্য আমিষ, ভিটামিন আর খনিজ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বেশি দরকার। আবার যারা পরিশ্রমী তাদের শ্বেতসার  ও স্নেহজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। সহজে হজম হয় এমন খাবার বয়স্কদের জন্য বেশি দরকার। কিন্তু আমিষ ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ খাবার বয়স্কদের বেশি দেয়া যাবে না। বরং যতকম দেয়া যায় তত ভালো। সুতরাং সব বয়সীদের খাদ্য নির্বাচনে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। আরেকটি কথা সমপুষ্টি পেতে দামি খাবারের চেয়ে কমদামি খাবার নির্বাচনও যে যুক্তিযুক্ত আমরা কিন্তু তা ভাবি না। এ ব্যাপারে আগ্রহী এবং অভিজ্ঞ হলে আমাদের জাতীয় লাভ বেশি হবে।

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেন দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন এবং দেহকে সুস্থ সবল ও নিরোগ রাখার জন্য নানাবিধ শাকসবজি ফলমূল খাওয়া অতি প্রয়োজনীয়। এগুলো ছাড়া সুষম খাবারের কথা চিন্তাও করা যায় না। খাদ্য বিজ্ঞানীদের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ২৫০ গ্রাম  শাকসবজি খাওয়ার প্রয়োজন। আর আমরা খেতে পারছি মাত্র ৫০-৬০ গ্রাম। ফল খাওয়া দরকার ১৪০ গ্রাম। আমরা খেতে পারছি মাত্র ৪০-৪৫ গ্রাম। তাহলে প্রাপ্তি আর সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান অনেক। এত ব্যবধানে সুস্থ সবল থাকার কোনো উপায় নেই। আমরা জানি, আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল রাখার জন্য ৬টি খাদ্য উপাদান ঠিকমতো খাওয়া। এ ৬টি উপাদান হলো প্রোটিন বা আমিষ, শর্করা বা শ্বেতসার, স্নেহ বা চর্বি, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, মিনারেল বা খনিজ এবং পানি। পানি আর শ্বেতসার নিয়ে এখন আর কথা বলার নেই। কেননা এ দুটি পুষ্টি উপাদান আমাদের পর্যাপ্ততা আছে। তবে পানির ক্ষেত্রে পানির অপর নাম জীবন একথা না বিশ্বাস করে নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন এটিকে বেদবাক্য মেনে পানি খাওয়া দরকার সচেতনভাবে। মোটামুটিভাবে তেলও আমরা ইদানীং গ্রহণ করছি প্রয়োজনের খুব কাছাকাছি। বেশি জোর দিতে হবে আমিষ, ভিটামিন আর খনিজ উপাদানের ওপর। এগুলোর মূল উৎস শাকসবজি ও ফলমূল।

এবার সংক্ষেপে জেনে নিই শাকসবজি ফলমূলভিত্তিক কোন কোন উপকরণে কোন কোন পুষ্টি উপাদান আছে। আমিষের যোগানের জন্য মাছ, মাংস, ডিম, দুধের সাথে সব ধরনের ডাল, শিম, মটরশুটি, বরবটি খেতে পারি, শ্বেতসার বা শর্করার উৎস হিসেবে ভাত রুটির সাথে আলু, মিষ্টিআলু, শাকআলু, কচু, মূলজাতীয় সবজি, আম, কাঁঠাল, পেঁপে খেতে হবে। স্নেহজাতীয় পুষ্টির জোগানে নারিকেল, তেলজাতীয় ফসল, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, জলপাই, কাঁকরোল, সরিষা, তিল, তিসি, সূর্যমুখী খেতে হবে। ক্যালসিয়ামের জন্য সব ধরনের শাকসবজি, কাচা পাকা কলা, জাম, লৌহের জন্য গুড়, শাকসবজি, তেঁতুল, তরমুজ, কলা এবং আয়রনের জন্য আনারস, বিভিন্ন শাকপাতা, আর বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের জন্য সব ধরনের রঙিন শাকসবজি, সব ধরনের ফল খেতে হবে।

পুষ্টিবিদরা বলেন প্রতিদিন যদি একজন মানুষ ৫ রঙের চার্ট অনুসরণ করে প্রতিদিনের খাবার খান তাহলে তার পুষ্টির কোনো অভাব হবে না। বিশ্ব পুষ্টি সমাধানের সাথে আমরাও আমাদের পুষ্টি নিয়ে ভাবছি এটা ঠিক। আমরাও পিছিয়ে নেই সেখান থেকে। পুষ্টির এ সমস্যা সমাধানে নতুন ধারণা সৃষ্টি করেছেন পুষ্টিবিদরা। তারা নাম দিয়েছেন ফাইভ কালারস এ ডে অর্থাৎ দিনে ৫ রঙের খাবার। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে আমরা নাম দিতে পারি রঙধনু খাবার। ব্যাপারটি হলো যে কোনভাবে প্রতিদিনের খাবারে এ ৫ রঙের খাবার থাকতেই হবে। তবেই কেবল আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে যাবো অনায়াসে। ৫টি রঙ হলো লাল, হলুদ, সাদা, সবুজ এবং কালো। লাল রঙের খাবারের উৎস হলো লালশাক, বিট, টমেটো, ডালিম, তরমুজ, লাল ক্যাপসিকাম, মুশুর ডাল। হলুদ রঙের যোগানদাতা হলো গাজর, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টিকুমড়ার ফুল, পেঁপে, আম, কাঁঠাল, বেল, তাল, আনারস, কলা, কমলা, ডেউয়া, লটকন, বাঙ্গি, মুগ, মাশডাল, হলুদ ক্যাপসিকাম। সাদা রঙের মধ্যে আছে মাশরুম, ফুলকপি, মুলা, আলু, বেগুন, কচু, শালগম, ওলকপি, কুল, লিচু, পেয়ারা, নারকেল, শরিফা, আতা, জামরুল আমলকী, কামরাঙা। সবুজ রঙের খাদ্য আসবে বাঁধাকপি, সবুজ ফুলকপি, শিম, বরবটি, মটরশুটি, ঢেড়স, লাউ, সবুজ ক্যাপসিকাম, পুঁইশাক, পালংশাক, ধনিয়া, পুদিনা, চাল কুমড়া, কলমিশাকসহ অন্যান্য সবুজশাক থেকে। কালো রঙের যোগানদাতা খাদ্য হলো কালোজাম, কালো আঙুর, কালো পাতাকপি, কালো বেগুন। এভাবে পরিকল্পনা করে বেড়ে ওঠা শিশুসহ সবার জন্য খাদ্য তালিকা তৈরি করে প্রাপ্তি জোগান নিশ্চিত করে খাওয়াতে পারলে আমরা আমাদের দৈনিক জীবনে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে যাবো অনায়াসে, কমদামে, কাক্সিক্ষত বলয়ে। এ সহজ, সরল ব্যাপারটি মনে রেখে প্রতিদিনের খাবার খেলে খাবারভিত্তিক পুষ্টির দৈন্যতা আমাদের আর থাকবে না। আর রঙধনু কিংবা ফাইভ কালারস এ ডে ব্যাপারটি দারুণভাবে জনপ্রিয় করার সুযোগ আছে সবার মাঝে। বয়স, শ্রম, চাহিদা, অবস্থা অনুযায়ী খাবার নিশ্চিত করতে পারলে পুষ্টিগত লাভ বেশি হবে। সুতরাং আসুন না আমরা পুষ্টি অভিজ্ঞতা বাস্তবায়ন করি আমাদের পরিবারে বাস্তবায়নের এবং বিস্তৃতির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালাই অন্য সবার পরিবারে, সার্বিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য। আরেকটি কথা এ রঙধনু চার্ট বা তালিকার কথা বেতারে, টেলিভিশনে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিসে, রাস্তায়, সিনেমায়, যানবাহনে, স্টেশনের, পত্রিকায়, প্রচারণায়, সব জায়গায় নিয়মিত এবং পরিমিত কৌশলে আবশ্যকীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হবে এক সাথে। তবেই কার্যকারিতা বা ফলাফল আসবে কাক্সিক্ষত পরিসীমায়। মনে রাখতে হবে, সুস্থ নাগরিক মানে সুস্থ দেশ। আমাদের করণীয় হলো-

আমাদের প্রত্যেকের বাড়ির আঙিনায় যেটুকু খালি, পতিত জায়গা আছে তা যথাযথভাবে পরিকল্পনা আর ব্যবস্থাপনার মাধ্যম প্রয়োজনীয় ফলমূল, শাকসবজির বাগান গড়ে তোলা এবং প্রয়োজন আর চাহিদা অনুযায়ী খাওয়া;
যে কোনোভাবেই হোক প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ তাজা সতেজ বিষমুক্ত শাকসবজি ফলমূল খাওয়া;
বাজার থেকে যাচাই বাছাই করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিশেষ করে শাকসবজি ফল মূল কেনা;
তরিতরকারি কাটার সময় বাকল বা চামড়া না ফেলা, ফল খাওয়ার সময় যথাসম্ভব চামড়া না ফেলা, তবে ভালোভাবে পরিস্কার করে খাওয়া; রান্নার সাথে কালিজিরা, রসুন, পেঁয়াজ, মৌরি, ধনিয়া অনুপাত অনুসারে যোগ করা;
প্রতিদিন নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণ শাকসবজি পুষ্টি বুঝে খাওয়া;
প্রতিদিন কমপক্ষে ১/২টি করে দেশীয় ফল খাওয়া তা যে ওজনের, মাপের বা আকারের হোক না কেন;
পরিমাণ মতো পরিমিত খাওয়া অর্থাৎ শিডিউল করে পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের চাহিদা প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়া;
ফলমূল শাকসবজি কাটার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া; কাটার পরে কখনো না ধোয়া;
অনেকে বিভিন্ন কিছু রান্নার সময় সিদ্ধ করা পানি ফেলে তারপর তরকারি রান্না করেন এটি মোটেও ঠিক না;
যত বড় করে কাটা যায় তত বেশি ভালো;
রান্না করার সময় যত কম পানি ব্যবহার করা যায়  সেদিকে লক্ষ্য রাখা;
কম জ্বালে আস্তে আস্তে রান্না করা; যথাসম্ভব কম মশলা ব্যবহার করা;
রান্না করার সময় পাতিলের ঢাকনা দিয়ে রান্না করা;
রান্নার পর গরম গরম সতেজ খাওয়া; চর্বি জাতীয় রান্নায় ঢাকনা খুলে রান্না করা;
মিশ্ররান্না শরীরের জন্য, পুষ্টির জন্য বেশি লাভজনক, সুতরাং পারতোপক্ষে বিভিন্ন ব্যঞ্জনের সমন্বয়ে তরকারি রান্না। বেশি ভালো হয় যদি শাকসবজি রান্নার সময় কিছু পরিমাণ মুগ, খেসারি, মুশুর ডালের সাথে রান্না করা যায়;
ভাতের মাড় না ফেলে মাড়সহ ভাত রান্না করা;

ইদানীং কৃষি গবেষণা, উদ্ভাবন এবং কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার কারণে বাজারে সময়ে অসময়ের শাকসবজি ফলমূল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। দাম যদিও আকাশচুম্বি। কিন্তু আমরা জানি না কি কিনছি আমরা বা কি কিনে খাচ্ছি? হয়তো এসব শাকসবজি, ফলমূলের মধ্যে রয়েছে মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। যার কারণে আমাদের শারীরিক মানসিক, মানবিক বিভিন্ন বিপর্যয় ডেকে আনে অনায়াসে। আমাদের শ্রমের ঘামের বিনিময়ে কেনা এসব আবশ্যকীয় উপাদান। সেজন্য পারতপক্ষে নিজেরা যদি যে কোনো পরিসরেই হোক না কেন একচিলতে জমিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদামাফিক শাকসবজি উৎপাদন করা যায় তাহলে তো কথাই নেই। জমি ছাড়াও ছাদে বাগান, বাড়ির আঙিনায়, বারান্দায়, টবে, ড্রামে, কৌটায়, বস্তায় কোথায় না করা যায়!  শুধু প্রয়োজন ইচ্ছা শক্তিটাকে জাগিয়ে তোলা আর সে প্রেক্ষিতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা। আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য চিন্তা ভাবনা ছাড়াই আমাদের দেশীয় শাকসবজি ফলমূলের ওপর একান্তভাবে নির্ভর করতে পারি। শুধু প্রয়োজন পরিকল্পনা, সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। একটি সুস্থ, সবল, সতেজ নির্ভেজাল জীবন আমাদের সকলের কাম্য। সে প্রত্যাশায় ফলমূল, শাকসবজি ও ফলমূলভিত্তিক ব্যবস্থাপনা আমরা নিশ্চিত করবো এবং অনুসরণ করবো এ হোক আমাদের অঙ্গীকার। আর পুষ্টিসমৃদ্ধ বিষমুক্ত প্রয়োজনীয় খাবার উৎপাদনের সাথে খাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারলে আমরা গর্বের সাথে বলতে পারবো পুষ্টিসম্মত খাবার খেয়ে নিরাপদ খাদ্য দিয়ে আমরা গড়বো আমাদের কাক্সিক্ষত খাদ্য নিরাপত্তা বলয়। তখন সুখে থাকবে বাংলার মানুষ, সুখে থাকবে বাংলাদেশ।

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*
*অতিরিক্ত পরিচালক, ক্রপস উই, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা; subornoml@yahoo.com

Share Button