ডেস্ক রিপোর্ট>> যুগযুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে ধান, পাট ও কলা চাষ করা জমিতে কুল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা দশদোনা গ্রামের ফজলুর রহমান। তার জমিতে উৎপাদিত এই কুল যাচ্ছে মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে। অন্যান্য ফসলে পরিশ্রম আর খরচের তুলনায় হতাশাজনক উৎপাদন ও লাভের কারণে ২০০৭ সালে স্থানীয় একটি নার্সারি থেকে আপেল এবং থাই কুলের কলমের চারা সংগ্রহ করে ঢাকা কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে দশদোনা গ্রামে ৩২ শতাংশ আবাদি জমিতে তিনি কুলের চারা রোপণ করেন। প্রথম বছর ভালো ফলন না হলেও হতাশ না হয়ে তিনি ভালো করে গাছের যতœ নেন এবং পরের বছরই আকাক্সিক্ষত ফলন পান। এরপর থেকে গাছগুলোর বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলনও যেমন বাড়তে থাকে তেমনি এই বাগানের কুলের সুনামও ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
সরেজমিন কুল বাগান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কুলের ভারে প্রতিটি গাছের শাখা নুয়ে পড়েছে। পাকা কুলের মৌ মৌ গন্ধে চার দিক সুরভীত। পাকা কুল বিভিন্ন প্রকার পাখির উপদ্রুপ থেকে রক্ষার জন্য সম্পূর্ণ বাগান জাল দিয়ে আবৃত্ত করে রেখেছেন।
বাগানের মালিক ফজলুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এই জমি থেকে ধান ও পাট চাষ করে বছরে ১৫-২০ হাজার টাকা পেতেন। বর্তমানে তিনি এই বাগানের কুল বিক্রি করে প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। কুল বাগানের পরিচর্যার বিষয়ে বাগানের মালিক বলেন, প্রতি বছর বাগানের কুল উঠানো শেষ করে গাছের ডালপালা ছেটে গাছের গোড়ায় পরিমিত গোবর বা কম্পোস্ট জাতীয় সার এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। নতুন পাতা গজানোর পর পাতা কোকড়ানো থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক দিতে হয়। কুল গাছে তেমন রোগ বালাই না থাকায় এতে উৎপাদন খরচও অনেক কম। কুল ধরার জন্য গাছের শাখায় মুকুল আসার পর কুল ছোট থাকা অবস্থায় অনেক সময় হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে যায় এবং এক প্রকার পচন ধরে। তবে এই দুই প্রকার রোগ থেকে কুল বাঁচানোর যথাযথ পরিচর্যা করতে পারলে অধিক লাভবান হওয়া যায়। নিয়মিত পরিচর্যা করলে প্রতি গাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ কেজি কুল পাওয়া যায়। কুল পরিপক্ব হলে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এই দুই মাস নিয়মিত কুল বিক্রি করতে পারেন। প্রতি কেজি কুল আশি থেকে নব্বই টাকা করে বাগান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায় বলে কুল বাজারেও নিতে হয় না। এই আপেল ও থাই কুল খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং প্রতিটি কুল আকৃতিতে বড় হওয়ায় বাজারে কুলের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। তাই স্থানীয় প্রবাসীরা এই বাগানের কুল নিয়ে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যেও।
তিনি আরো জানান, কুল চাষের জন্য স্থানীয় কৃষকদের যদি কৃষি বিভাগ উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে তাহলে মনোহরদীতে কুল চাষে বিপ্লব আনা সম্ভব। কুল বাগানের এই স্বপ্ন সারথী ফজলুর রহমান উপজেলার দশদোনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আরবি প্রভাষক।
মনোহরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ জানান, এই অঞ্চলের মাটি কুল চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকেরা সুন্দর পরিকল্পনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে কুল চাষ করলে অন্যান্য ফসল থেকে আরো লাভবান হওয়া সম্ভব।
মনোহরদীতে কুল চাষ করে লাভবান ফজলুর রহমান
/ এক্সক্লুসিভ, সফল চাষী | তারিখ : মার্চ, ২৭, ২০১৮, ২:০৭ অপরাহ্ণ