‘সুখসাগর পেঁয়াজ’ চাষ করে গ্রামের প্রতিটি পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের মুখে ছিল হাসি, মনে ছিল আনন্দ। সে আশায় গত কয়েক বছর ধরে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার চাষিরা পেঁয়াজ চাষ করে আসছেন।
এ জাতের পেঁয়াজের ফলন বিঘাপ্রতি ১০০ থেকে ১৭০ মণ হয়ে থাকে। ভারত থেকে আনা উচ্চ ফলনশীল জাতের এ পেঁয়াজ চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে অনেকের। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমাদানিতে লোকসানের মুখে চাষিরা। এবারও দাম না পেয়ে হতাশ তারা। আবার সংরক্ষণের জন্য গবেষণা অব্যাহত থাকলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমাতে টেকসই জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল এ পেঁয়াজের সংরক্ষণকাল বাড়ানো দরকার।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের মাঠজুড়ে শুধুই পেঁয়াজের ক্ষেত। কিন্তু ক্রেতা কম। অনেকেই জমি থেকে পেঁয়াজ তুলতে পারছেন না। কৃষকরা বলছেন, দ্রুত পেঁয়াজ উঠাতে না পারলে মাঠেই নষ্ট হবে ফসল। তাদের অভিযোগ, এ বছর ভরা মৌসুমে বাইরের দেশ থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে চাষিদের ওপর। বিঘাপ্রতি জমিতে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ করে এখন বিক্রি করতে পারছেন না। এখন ফসলই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবমতে, জেলায় এবার ১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৪৬ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।
মুজিবনগর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের চাষি আবুল কালাম জানান, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কিন্তু বাজারে ক্রেতা কম। মণপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা। ফলে বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকদের জমছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। অথচ পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
শিবপুর গ্রামের জিয়াউল ইসলাম, হায়াত আলী, আশিক গাজী এবং বাবুল জানান, দাম কম থাকায় জমি থেকে পেঁয়াজ তুলতে পারছেন না। আবার সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থাও নেই। ফলে পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে আছেন তারা। এমন অবস্থা উপজেলার শত শত কৃষকের। ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি তাদের।
কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭-৮ টাকা দরে। ফলে পেঁয়াজ কিনে লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। বেশকয়েক ট্রাক পেঁয়াজ ঢাকা পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক পরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহামান জানান, আমদানি নির্ভরতা কমাতে হলে অবশ্যই দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ভারতের এ জাতটি কাজে লাগিয়ে নতুন জাত উদ্ভাবন করে পেঁয়াজের সংরক্ষণকাল বাড়াতে হবে। ভরা মৌসুমে যাতে পেঁয়াজ আমাদানি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান জানান, সারাদেশে এ জাতের পেঁয়াজের চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছে কৃষি বিভাগ। সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ সংরক্ষণের গবেষণা অব্যাহত আছে বলেও দাবি করেন তিনি।