
কৃষিকাজ ডেস্ক» কয়েক বছর আগে পাহাড়ের পাদদেশে আদা চাষ করে চমক দেখিয়েছিলেন জয়ধন তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক পাহাড়ি যুবক। তখন ১ মণ হাইব্রিড আদা চাষ করে ফলন পেয়েছিলেন ৯ মণ। পরবর্তী বছর সেই ৯ মণ আদা লাগিয়ে ফলন পান ৭৪ মণ। উৎপাদিত সেই আদা উচ্চ দরে বিক্রি করতে পারায় শুরুতেই আকস্মিকভাবে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে এই জয়ধন তঞ্চঙ্গ্যার। কথাগুলো বলছিলেন তিনি নিজেই।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ছোট পাগলিপাড়ার কৃষক রাম গোপাল তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে জয়ধন তঞ্চঙ্গ্যার বয়স বর্তমানে ত্রিশোর্ধ্ব। আজও প্রতি বছর আদা চাষ করেন তিনি। এভাবে উচ্চফলন হওয়ায় হাইব্রিড আদা চাষে ঝুঁকছেন আগ্রহী কৃষকরা। আসছে উচ্চফলন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রমণী কান্তি চাকমা।
তিনি বলেন, পাহাড়ে আদা চাষে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়ায় চাষিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ দেখা দিয়েছে। আদা চাষে পাহাড়ের পাদদেশের মাটির উর্বরাশক্তি এবং উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে হাইব্রিড আদা চাষে সাফল্য দেখা দিয়েছে। চাষিদের সহায়তা দিচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। প্রদর্শনীর জন্য জেলার কয়েকটি জায়গায় হাইব্রিড আদার চাষ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
চাষাবাদ নিয়ে সাফল্যের বিষয়ে জয়ধন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আদা চাষ করে আকস্মিক আর্থিক সাফল্য আসে তার। শুরুর দিকেই নিজের উৎপাদিত আদা বিক্রি করে লাখপতি হতে পেরেছেন তিনি। শুধু এক মৌসুম চাষেই লক্ষাধিক টাকার আদা বিক্রি করতে পেরেছেন। কয়েক বছরের ব্যবধানেই বিপুল আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে তার।
জয়ধন তঞ্চঙ্গ্য জানান, দারিদ্রতার কারণে পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পেরেছেন। দারিদ্র্যের কারণে বাধ্য হয়ে আয়-উপার্জনের জন্য লেগে যেতে হয়েছে কৃষিকাজে। এক পর্যায়ে নিজ জমির পাহাড়ের পাদদেশে ২ কেজি আদা লাগান। ২ কেজি আদা থেকে পান ১৪ কেজি। এতে উৎসাহিত হন তিনি।
এরপর এক আত্মীয়র কাছ থেকে ৪০ কেজি হাইব্রিড জাতের আদা সংগ্রহ করে চাষ করেন। একমণ আদা থেকে পেয়েছেন সাড়ে ৯ মণ। পরবর্তী বছর সাড়ে ৯ মণ আদা চাষ করে পান ৭৪ মণ। এরপর প্রায় ৩ একর জমিতে আদা চাষ করে পেয়েছেন ৭শ মণ।
এর কয়েক বছর আগে পাহাড়ের পাদদেশে আদা চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেন আবু তৈয়ব নামে আরেক চাষী।
তিনি জানান, যেখানে কোনো ফসল ফলানো যেত না, সেখানে হাইব্রিড আদা চাষে উচ্চফলন পান তিনি। ওই সময়ে এক মৌসুমে আদা চাষ করে ৬শ মণ বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি।
সফল আদা চাষি আবু তৈয়বের বাড়ি রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি উপজেলা সদরের আলীপুর গ্রামের পাহাড়ি এলাকায়।
স্থানীয় চাষিসহ কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু জয়ধন তঞ্চঙ্গ্যা ও আবু তৈয়ব নয়, পার্বত্য তিন জেলার আনাচে-কানাচে পাহাড়ের ঢালে এবং পাদদেশে আদা চাষ করে বিপুল সাফল্য আসছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেছেন বহু লোক।
বর্তমানে পাহাড়ে উৎপাদিত আদা স্থানীয় বাজার ছাড়াও যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। এমনকি বিদেশেও রফতানি হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের আদা। আর স্থানীয় চাষিদের মধ্যে আদা চাষে বেড়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ১০ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আদা চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় চাষিরা। আর আগ্রহী চাষিদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরনেন্দু ত্রিপুরা জানান, আদা চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জনের মাধ্যমে প্রান্তিক চাষিদের মাঝে উৎসাহ জাগানোর জন্য সফল চাষি জয়ধন তঞ্চঙ্গ্যাকে জেলা পরিষদ থেকে সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
তার উৎপাদিত হাইব্রিড জাতের আদা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন বিস্তারের জন্য জেলা পরিষদ জয়ধন তঞ্চঙ্গ্যা থেকে ৪২০ মণ আদা ক্রয় করে ১০ উপজেলার প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিতরণ করেছে।
তিনি জানান, এর আগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার আদা চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে।