
কৃষিকাজ ডেস্ক» কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করে ভাগ্য বদলেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের কৃষক আকবর আলীর। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে গত দুই বছর আগে চারটি ডাবর (মাটির তৈরি পাত্র) দিয়ে কেঁচো সার তৈরি শুরু করেন তিনি। তার খামারের নাম দিয়েছেন ‘মিনি আরা ভার্মি কম্পোস্ট’।
জমিতে কেঁচো সার ব্যবহারে উপকারিতা পাওয়ায় তিনি খামারে পাত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১৫০টি পাত্র। আর এসব পাত্র বাড়ির বারান্দা থেকে শুরু করে শোবার ঘরের ভেতর পর্যন্ত করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি পাত্রে প্লাটিক ঢাকনা এবং পলিথিন কেটে ঢাকনা করে ঢেকে রাখা হয়েছে।
গোবর, কচুরিপানা, কলাগাছ, লতাপাতা ও আর্বজনা খেয়ে কেঁচো মলত্যাগ করে এবং দেহ থেকে এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ বের করে। ফলে সহজেই জৈব সার তৈরি হয়। কেঁচো উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে তুলে থাকে। তবে গোবর থেকে সহজেই কেঁচো সার তৈরি করা যায়।
আকবর আলীর নিজের চারটি গরু আছে। গরুর গোবর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার না করে তিনি কেঁচো সার তৈরির জন্য সংরক্ষণ করেন। প্রতিদিনের গোবর একটি ছায়াযুক্ত স্থানে সপ্তাহ খানেকের জন্য রেখে দেন। গোবর থেকে গ্যাস বেরিয়ে গেলে তা পাত্রে রাখেন।
কৃষক আকবর আলী বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে কেঁচো সার তৈরি শুরু করি। কেঁচো সার তৈরিতে ২০-২২ দিনের মতো সময় লাগে। গোবরের মধ্যে কেঁচো ডিম দেয় এবং সেখান থেকেই কেঁচো জন্মে। তবে কেঁচোর পরিমাণ বেশি হলে সময়ও কম লাগে। এরপর নেট (জাল) দিয়ে চালাই (ঝেড়ে) করে কেঁচো পৃথক করা হয়। প্রতিটি পাত্র থেকে প্রায় ৫ কেজি কেঁচো সার হয়। আর প্রতিমাসে ১৫০টি পাত্র থেকে ৭৫০-৮০০ কেজি সার হয়ে থাকে। প্রতিকেজি সার ১৫ টাকা দরে বিক্রি করে খরচ বাদে প্রায় ১০ হাজার টাকা পেয়ে থাকি। এ ছাড়া প্রতি পিস কেঁচো ২ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। নিজের দেড় বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজি উৎপাদনে তিনি এ সার ব্যবহার করেন বলেও জানান।
কৃষক আকবর আলীর স্ত্রী মিনি আরা বলেন, ইদুর, টিকটিকি ও আরশোলা যাতে কেঁচোকে খেয়ে নিতে না পারে এজন্য প্রতিটি পাত্র ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখি। নিয়মিত পাত্রে রাখা গোবর উল্টে দেয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজ করে স্বামীকে সহযোগিতা করি। এ কাজ করতে গিয়ে প্রথমে একটু ভয় হতো। ঠিক মতো খাবারও খেতে পারতাম না। কিন্তু এখন সে ধরনের সমস্যা আর নেই।
উপজেলার পার-আধাইপুর গ্রামের কৃষক ফাজেদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ছাচি লাউতে কেঁচো সার ব্যবহার করেছি। গাছও ভাল হয়েছে এবং লাউও প্রচুর হয়েছে। রাসায়নিক সারের তুলনায় খরচও কম। জমিতে যে পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় তার অর্ধেক পরিমাণ কেঁচো সার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া আলুর জমিতেও কেঁচো সার ব্যবহার করবেন বলে জানান তিনি।
ভান্ডারপুর বাজারের সার ব্যবসায়ী সারোয়ার হোসেন বলেন, রাসায়নিক সারের তুলনায় কেঁচো সারের চাহিদা বেশি। স্বল্প খরচে কৃষকরা শাক-সবজিতে এ সার ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন। ফলে কেঁচো সারের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিকেজি কেঁচো সার পাইকারী ১৫ টাকা দরে কিনে ১৮-২০ টাকায় বিক্রি করেন।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় মাটি তার গুণাগুণ দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। ফলে মাটিতে জৈব সারের অভাব দেখা দিয়েছে। বর্তমান সময়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মধ্যে কেঁচো সার উৎকৃষ্ট। এ সার জমিতে ব্যবহার করলে মাটি তার প্রাণ ফিরে পায়।
তিনি আরও জানান, উপজেলায় সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট প্রকল্পের আওতায় কৃষক মাঠ স্কুলে কেঁচো সার তৈরির কৌশল শেখানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাঁচটি পরিবার খামারে কেঁচো সার তৈরি করছে। এটিকে তারা ব্যবসা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন। যারা এটিকে ব্যবসা আকারে নিয়েছে তারা লাভবান হচ্ছেন।