ছবি বিশ্বাস, গ্রাম : মনোহরপুর, উপজেলা : মনিরামপুর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : ঘেরের পাশে কুমড়া লাগিয়েছি, গাছে ফল ধরেছে। কিন্তু কচি অবস্থায় ফল পচে যাচ্ছে। কী করলে উপকার পাব?
উত্তর : কুমড়া গাছে কচি ফলগুলোতে ফলের মাছি পোকা আক্রমণ করলে কচি অবস্থায় ফল পচে ঝরে পড়ে। সেজন্য কচি কুমড়ায় নেট কাপড় বা পলিব্যাগ দিয়ে ব্যাগিং করা প্রয়োজন। ব্যাগিং করলে ফলের মাছি পোকা কচি ফলে আক্রমণ করে ফলের ভেতরে ডিম পাড়তে পারে না এবং ফলও নষ্ট হয় না। যে ধরনের ব্যাগই ব্যবহার করা হোক না কেন? খেয়াল রাখতে হবে ব্যাগটি বড় হতে হবে। কারণ ব্যাগটি কমপক্ষে কুমড়া ফলটিকে মাসখানেক ঢেকে রাখতে হবে। তারপর কুমড়া ফলের খোসা হাতের নখ দিয়ে টিপলে যদি সহজে না বসে যায়। তবে বুঝতে হবে এ অবস্থায় ফলের মাছি পোকার আক্রমণ করা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে ব্যাগটি কুমড়া ফল থেকে খুলে ফেলতে হবে। এছাড়া ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেও আমরা ফলের মাছি পোকা দমন করতে পারি। সেক্ষেত্রে তিন শতক জমিতে একটি ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে হয়। এভাবে কুমড়া ফসলের ব্যবস্থাপনা করলে অনেক বেশি লাভবান হবেন।
মো. রাশেদ, গ্রাম : মাথাভাঙ্গা, উপজেলা : পোরশা, জেলা : নওগাঁ
প্রশ্ন : ফসফেট সার ও দস্তা সার একত্রে জমিতে ব্যবহার করলে ফসলের কী ক্ষতি হয়?
উত্তর : ফসফেট সার ও দস্তা সার একত্রে জমিতে প্রয়োগ করলে ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ দুটো সার ফসলের জন্য নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি না হয়। কারণ অতিরিক্ত ফসফেট সার দস্তা সারের সহজলভ্যতাকে কমিয়ে দেয়। মাটির প্রকারভেদে ও মাটির পিএইচ এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সারের মাঝে নানা ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। আর সে কারণেই সুষম সার ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। সুষম সার প্রয়োগের জন্য অবশ্যই মাটি পরীক্ষার বিকল্প নেই। এজন্যই বলে সুষম সারের মাত্রা জেনে, ফসল করো নিয়ম মেনে।
মো. জয়নাল উদ্দীন, গ্রাম : লক্ষীরপাড়, উপজেলা : বিশ্বম্বপুর, জেলা : সুনামগঞ্জ
প্রশ্ন : শিমের গায়ে বাদামি-কালো রঙের কালো দাগ পড়ে এবং শিমগুলো পচে যাচ্ছে। কী করলে উপকার পাব?
উত্তর : শিমের গায়ে বাদামি-কালো রঙের দাগ পড়ে শিম পচে যায় অ্যানথ্রাকনোজ রোগের জীবাণু আক্রমণ করলে। এ সমস্যার সমাধানে প্রপিকোনাজল গ্রুপের যেমন টিল্ট ১ মিলিলিটার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে সুফল পাবেন। কিংবা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের যেমন টপসিন ২ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে শিম গাছে বিকেল বেলা স্প্রে করলে ভালো ফলাফল পাবেন। এছাড়া এ রোগ প্রতিরোধে রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা প্রয়োজন। আর শিম গাছ ও বাগানকে সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখলে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেক কমে যাবে। আর অনেক বেশি ফলনও পাওয়া যাবে।
মো. রফিকুল ইসলাম, গ্রাম : ইসলামপুর, উপজেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন : লেবু গাছের আগা মারা যাচ্ছে। এ সমস্যাটির প্রতিকার সম্পর্কে জানাবেন।
উত্তর : লেবু গাছের আগা মরে যাওয়া রোগ হলে প্রথমে লেবু গাছের যে অংশটুকু মরে গেছে সেখান থেকে কিছু সুস্থ অংশসহ ধারালো চাকু দ্বারা সুন্দরভাবে কেটে ফেলতে হবে। তারপর কাটা অংশে বর্দোপেস্ট এর প্রলেপ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ১ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম তুঁত ও ১০০ গ্রাম চুন মিশিয়ে বর্দোপেস্ট তৈরি করতে হয়। এছাড়া কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের যে কোনো ছত্রাকনাশক ৪ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পরপর ১/২ বার স্প্রে করা। সেসাথে লেবু বাগানটিকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। এসব নিয়ম মেনে চললে লেবু গাছের আগা মরা রোগ দমন করতে পারবেন।
তানিয়া সুলতানা, গ্রাম : পায়রাবন্দ, উপজেলা : মিঠাপুকুর, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : আমগাছের নতুন পাতাগুলোর গোড়া থেকে পোকায় কেটে দিচ্ছে, প্রতিকারের উপায় কী?
উত্তর : আমগাছের নতুন পাতাগুলো গোড়া থেকে কেটে দেয় যে পোকা। তার নাম আমের পাতা কাটা উইভিল। এ পোকা দমনে আম গাছে কচি পাতা দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের যেমন রিপকর্ড ১ মিলিলিটার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকেল বেলা স্প্রে করা। অথবা ফেনথিয়ন গ্রুপের যেমন লেবাসিড ১ মিলিলিটার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে একই নিয়মে স্প্রে করা। তাহলেই আপনি সুফল পাবেন।
মো. আব্দুর রাজ্জাক, গ্রাম : চকগৌরী, উপজেলা : পত্নীতলা, জেলা : নওগাঁ
প্রশ্ন : বোরো ধানের বীজতলা কিভাবে প্রস্তত করব?
উত্তর : বোরো ধানের বীজতলা তৈরির জন্য বীজতলার জমি ২ থেকে ৩টি চাষ দিয়ে মাটি আলগা করে প্রয়োজনীয় পানি সেচের মাধ্যমে থক থকে কাদা করে এক বা একাধিক মই দিয়ে সমান করতে হবে। তারপর ১ মিটার প্রস্থ রেখে এবং সুবিধামতো দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বেড তৈরির মাধ্যমে আদর্শ বীজতলা তৈরি করতে হয়। পাশাপাশি দুইটি বীজতলার মাঝখানে ১ ফুট প্রশস্ত নালা রাখা দরকার। নালা রাখলে বীজতলায় সেচ, অতিরিক্ত পানি নিকাশ, পরিচর্যা এবং রোগবালাই দমনে বালাইনাশক স্প্রে করা সহজ হয়। প্রতি শতকে ২.৫ কেজি অঙ্কুরিত বীজ বপন করতে হয়। এতে করে বীজতলায় চারা সুস্থ ও সবল হবে। সুস্থ সবল চারা মানেই বেশি ফলন সুনিশ্চিত। এভাবে বোরো ধানের বীজতলা করলে অবশ্যই আপনি ভালো ফলন পাবেন।
বাবুল চন্দ্র রায়, গ্রাম : কালিগঞ্জ, উপজেলা : জলঢাকা, জেলা : নীলফামারি
প্রশ্ন : গরুর সারা শরীরে আঁচিল হয়েছে। কী করব? পরামর্শ চাই।
উত্তর : অটোহিমোথেরাপি দিতে হবে। বড় ও মাঝারি গরুর জন্য জগুলার শিরায় ১০ থেকে ১২ মিলিলিটার রক্ত সিরিঞ্জের মাধ্যমে সংগ্রহ করে সংগৃহীত রক্ত তাড়াতাড়ি রানের মাংস পেশিতে দিতে হবে। এভাবে পর পর ৩টি ইনজেকশন ৫ থেকে ৭ দিন দিলেই এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত পরামর্শ পাওয়ার জন্য আপনার কাছের উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন।
মো. ফারুক হোসেন, গ্রাম : ভাটখোর, উপজেলা : গোমস্তাপুর, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন : গাভীর জরায়ু বের হয়ে আসে। এ সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি?
উত্তর : ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম সকেঠিল পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে বের হয়ে আসা জরায়ু ভালোভাবে পরিষ্কার করে আবার ভেতরে ঠেলে দিতে হবে। ক্যাল ডি মেগ ইনজেকশন ১০০ থেকে ২০০ মিলিলিটার শিরায় আস্তে আস্তে প্রয়োগ করলে জরায়ু ভেতরে ঢুকে যাবে। উক্ত ইনজেকশন দেয়ার পর যদি ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে কাজ না হয় তাহলে আবার উক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে। এ বিষয়ে আরো পরামর্শ গ্রহণের জন্য আপনার কাছের উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন।
মো. মোর্শেদ আলী, গ্রাম : চন্তিপুর, উপজেলা : শ্যামনগর, জেলা : সাতক্ষীরা
প্রশ্ন : চিংড়ির ফুলকায় কালো দাগ ও পচন দেখা যাচ্ছে এবং খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা যাচ্ছে কী করব?
উত্তর : পুকুরের তলদেশে জৈব পদার্থের পচন বৃদ্ধি পেলে এবং কুসোরিয়াম ও স্যাপ্রোলেগমিয়া ছত্রাক এ রোগের কারণ। এ রোগ প্রতিরোধে হররা টেনে দ্রুত পানি পরিবর্তন করতে হবে। অ্যাসকরবিক এসিড ২০০ মিলিগ্রাম ১ কেজি খাদ্যে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এছাড়াও প্রতিষেধক হিসেবে ভাইরেক্স এবং টেট্রাভেট জীবাণুুনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
মো. আলমগীর হোসেন, গ্রাম : টেপীবাড়ি উপজেলা : ভুয়াপুর, জেলা : টাঙ্গাইল
প্রশ্ন : মাছের পেট ফোলা রোগ হয়েছে এবং মাছ মারা যাচ্ছে। কী করব?
উত্তর : মাছের পেট ফোলা রোগ হলে প্রথমে আক্রান্ত মাছগুলোকে আলাদা করতে হবে এবং সিরিঞ্জ দিয়ে মাছের পেট থেকে পানি বের করে দিতে হবে। মাছের খাবারের সাথে টেরামাইসন ক্যাপসুলের গুঁড়া ১ গ্রাম ১ কেজিতে মেশাতে হবে। অক্সিজেনের অভাবে এ রোগ হয়। মাছের ঘনত্ব কমিয়ে চুন প্রয়োগ ও জাল টেনে বা হররা টেনে অক্সিজেন তৈরি করে এ সমস্যার প্রতিকার করা যায়।
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন*
* উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এল আর, সংযুক্ত কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫ suman_arefin@yahoo.com